ইমামের পিছনে সালাতে সুরায়ে ফাতিহা পাঠ ও আমিন বলা প্রসঙ্গে হাতেম বিন পারভেজ




























ইমামের পিছনে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে :- ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা ফরজ।
সালাত জেহরী হোক বা সিররী হোক অর্থাৎ- সালাত স্বরব বিশিষ্ট হোক বা নীরব বিশিষ্ট উভয় সালাতেই মুক্তাদি অবশ্যই সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে। ইমামের পিছনে যদি মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ না করে-তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা সকল মুসাল্লীর জন্য ফরজ মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি হোক বা মুনফারিদ। মুসাল্লী মুক্বীম হোক বা মুসাফির।
ইমাম বুখারী (রাহ) বলেন: "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদি ক্বিরায়াত পড়া ফরয। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায়, সশব্দে ক্বিরায়াতের সালাত হোক বা নি:শব্দে, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরায়াত (সূরাহ ফাতিহা) পড়া অবশ্য কর্তব্য।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান -১০ অধ্যায়-৯৫)
★ জেহরী সালাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ:- "তোমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত কিছুই পড়বে না (জেহরী সালাতে) কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পড়বে না তার সালাত শুদ্ধ হবে না।" (আবূ দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত-হাদিস নং ৮৫৪, হাদীস হাসান, নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, হা/৭০৬)
★ আবূ সাঈদ খুদরী রাদায়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন:- " আমাদেরকে নিদের্শ দেয়া হয়েছিল আমরা যেন সূরা ফাতিহা পড়ি এবং যা সহজ তাও যেন পড়ি।" (সিররী সালাতে) (সহীহ আবূ দাউদ, হা/৮১৮, হাদিস সহীহ)
★ আবূ হুরাইরাহ রাদিঃ বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সা) আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি যেন ঘোষণা করে দেই যে, "নিশ্চয়ই সালাত শুদ্ধ নয় সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত। অতঃপর অতিরিক্ত কিছু"। (সহীহ আবূ দাউদ, হাদিস নং ৮২০, হাদীস সহীহ)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ " আমি যখন উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পড়ি, তখন তোমাদের কেউ যেন সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত আর কিছুই না পড়ে।" (দ্বারা কুত্বনী- এ হাদিসের সকল বর্ণনাকারী ছিকাল বা বিশ্বস্থ। নাইলুল আওত্বার হাদিস নং ৭০৭)
ইমাম আশ-শাওকানী ৭০৬ ও ৭০৭ নং হাদীস বর্ণনা করার পর বলেনঃ যারা এসকল হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে বলেন, ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা অবশ্য করণীয়-তারাই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। (নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, ৩১৩পৃষ্ঠা)
★ আনাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সা:) মুক্তাদিদের উদ্দেশ্যে বললেন: "তোমরা কি ইমামের ক্বিরায়াত পাঠ করা অবস্থায় ইমামের পিছনে ক্বিরায়াত পাঠ করে থাক? তোমরা এটা করবে না। তবে তোমরা অবশ্যই চুপে চুপে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী জুযউল ক্বিরায়াহ, ত্বাবরানী, বায়হাক্বী, সহীহ ইবনু হিব্বান হা: ১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
★ আল্লাহর রাসূল সা ইরশাদ করেন: "যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (সহীহুল বুখারী, হা/৭৫৬) অর্থাৎ- সালাত ফরয হোক বা নফল, জানাযা হোক বা ঈদ। মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি বা মুনফারিদ। সালাত স্বরবে হোক বা নীরবে। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফরে। সর্বাবস্থায় প্রতি রাকআতে প্রত্যেকের জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া ফরয।
* "আল্লাহর রাসূল সা সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি আমার পিছনে পড়ে থাক? তারা বললেন হ্যাঁ, আমরা খুব তাড়াহুড়া করে পাঠ করে থাকি। অত:পর রাসূল (সা) বললেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত কিছুই পড়বে না।" (বুখারী, জুযউল ক্বিরায়াহ-৬৬, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিজী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ। মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ, মুওয়াত্তা মালিক, সহীহ ইবনু খয়াইমাহ,, মিশকাত)
* আলী বিন আবূ তালিব রাদায়াল্লাহু হতে বর্ণিতঃ ইমাম যেসব সালাতে আস্তে-ক্বিরায়াত পড়েন, তখন তুমি জোহর, ও আসরের প্রথম দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পাঠ করবে। আর জোহর ও আসরের শেষ দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। মাগরিবের শেষ রাকয়াত এবং ইশার শেষ দুরাকয়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী- জুযউল ক্বিরায়াত হা/১)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেন:- "যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (বায়হাক্বী-কিতাবুল ক্বিরায়াত পৃ:৫৬)
* আল্লাহর নাবী সা ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি এমন সালাত আদায় করলো-যাতে সে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না। তার সে সালাত বিকলাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ, অকেজ তার সালাত অসম্পূর্ণই রইল। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯৫)
হাদিসের ইমামগণ হাদিসের কিতাবে যেভাবে অধ্যায় রচনা করেছেন-
ইমাম বুখারী (রহ)
শাইখ ইমামুল হুজ্জাহ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ আল-বুখারী আল-জুফী এর অধ্যায়:- "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদির কিরআত পড়া জরুরী, মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায় হোক, সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নি:শব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরাআত পড়া অবশ্য করণীয়।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান-১০, অধ্যায়ঃ ৯৫, পৃষ্ঠা ২৯৩ ও ৩৬৫ তা: পা:)
ইমাম মুসলিম (রহ)
ইমাম আবূ হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশাইরী আন-নিসাপুরী-এর অধ্যায়-"প্রতি রাকআতে সূরাহ ফাতিহা পড়া অপরিহার্য। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাহ-৪, অধ্যায়-১১, পৃষ্ঠা ৩৬১ ও ৩৭৫, আ: হা: লা:)
ইমাম তিরমিযী (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ মুহাম্মাদ বিন ঈসা বিন সাওরাহ আত-তিরমিযী- এর অধ্যায়ঃ- "সূরাহ আল-ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। (তিরমিযী, কিতাবু মাওয়াক্বীতিস সালাতি আন-রাসূলিল্লাহি সা -২, অধ্যায়-৭১)
ইমাম আবু দাউদ (রহ)
ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আশ'আস আসসিজিস্তানী- এর অধ্যায়ঃ- "যে ব্যক্তি তার সালাতে সূরাহ ফাতিহার কিরাআত ত্যাগ করলো।" (সহীহ আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাহ- ২ অধ্যায়- ১৩৬)
ইমাম নাসাঈ (রহ)
ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন-নাসাঈ- অধ্যায়-: "সালাতে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ অপরিহার্য। (সহীহ আন-নাসাঈ, কিতাবুল ইফতিতাহ-১১ অধ্যায়-২৪)
ইমাম ইবনু মাযাহ (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ আল-ক্বাযয়ীনী ইবনু মাযাহ এর অধ্যায়। "ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ প্রসঙ্গ"। (সহীহ ইবনু মাযাহ, কিতাবুস সালাহ-২, অধ্যায়-১১)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও হানাফী মাযহাব-
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের সম্মানিত আইয়িম্মাহ, মুহাদ্দিসীন, ফুক্বাহা, উলামা ও মাশাইখগণের অভিমত :
এক
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফেক্বার কিতাব হেদায়ার লেখক শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী আবূ বকর (রহ) হেদায়ায় ইমাম মুহাম্মাদ রহ থেকে বর্ণনা পেশ করে বলেন- "সতর্কতামূলক মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পড়াই উত্তম" (হেদায়া, ১ম খন্ড বাংলা প্রকাশনায় ইফাবা, পৃষ্ঠা ৯৪)। হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৯। ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলীল, পৃষ্ঠা ৯২-৯৩)
উল্লেখ্য যে, লোখসানের আশংকা হতে নিষ্কৃতি পাবার জন্য যে সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা যায় তাকে আরবীতে ইহতিয়াত বলা হয়। ঐ ইহতিয়াত শব্দের প্রতি হেদায়ার টীকায় উল্লেখ হয়েছে: এ কথার সম্ভাবনা হতে পারে যে, ইমাম শাফেঈ যা বলেছেন যে, সূরা ফাতিহা পড়া রুকন সকল মুসাল্লীর জন্য তাই প্রকৃত পক্ষে আসল হক কথা। (হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৬)
দুই
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী দেওবন্দী হানাফী রহ: বলেছেন: "রাসূল সা হতে এমন একটি হাদীস ও উদ্ধৃত হয়নি যাতে রাসূলুল্লাহ সা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। অত:পর বলেন- হানাফীরা এ সম্পর্কে যা কিছু প্রচার করে তার কতকগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট আথবা সনদের দিক দিয়ে আদৌ সহীহ বলে গণ্য নয়।" (রাসূলুল্লাহ সা সালাত, পৃষ্ঠা ২২৬ ও হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৬৩, আল্লামা আবূ মুহাম্মাদ আলীমুদ্দীন।)
তিনি আর বলেন, "আস্তের নামাযে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া উত্তম এবং জোরের নামাযে সাক্তার সময় পড়ায় কোন ক্ষতি নাই।
নিশ্চয়ই ইমাম মোহাম্মাদ যখন আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া জায়েজ এবং উত্তম বলেছেন, তখন অবশ্যই জোরের নামাযে ইমামের সাক্তার সময় পড়া আর আস্তের নামাযে পড়ার মধ্যে কোন পার্থক নাই। (ইমামুল কালাম, পৃষ্ঠা ১৫৬, আল্লামা আব্দুল হাই নাখলৌভী। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬, দলিল নং ১৭১)
তিন
ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানাফা রহ: এর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত- "শেষ বক্তব্য হলো: মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতা মূলকভাবে উত্তম।" (গাইছুল গাম্মাম হাশিয়া ইমামুল কালাম পৃষ্ঠা ১৬৫। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯০ দলিল নং ১৫৮)
চার
ইমাম আবূ হানিফা রহ: এর উস্তাদ হযরত 'আতা রহ: বলেন সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈগণ জোরের এবং আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্যে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন।" (জুয: ক্বিরা: ৮, ইমাম বুখারী রহ সূত্র: ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৮২ ও ৯০ দলিল নং ১৩৪ ও ১৫৮)
পাচঁ
হানাফী মাযহাবের অন্যতম বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম আল্লামা আইনী রহ: বলেন- "আমাদের অনেক ফুক্বাহায়ে হানাফী সকল নামাযে মুক্তাদি জন্যে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতামূলক উত্তম জানতেন।" (উমদাতুল কারী, শরহে বুখারী ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯। সূত্র ই: পি: সূ: ফা: প: দলিল, পৃষ্ঠা ৯৩ দলিল নং ১৬৫)
ছয়
পাক-ভারত উপ-মহাদেশের মুহাদ্দিসিনদের উস্তাদ আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী হানাফী রহ: বলেন- "যদি ইমাম জোরে ক্বেরাত পড়েন তাহলে মুক্তাদি ইমামের সাকতার বিরতির সময় পড়বে আর যদি ইমাম আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন তাহলে মুক্তাদি তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে। সূরাহ ফাতিহার ব্যাপারে এপদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। যাতে ইমামের ক্বিরাত অসুবিধা না হয়। ইমামের পিছনে এভাবে পড়াই আমার কাছে উত্তম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪। দলিল নং ১৭০)
সাত
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: এর সম্মানিত পিতা শাহ আব্দুর রাহীম দেহলভী রহ হানাফী -এর আমলঃ- "তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং জানাযা নামাযে ও পড়তেন।" (আনফাসুল আরিফিন, পৃষ্ঠা ৬৯। সুত্র দলিল-৯৪ পৃষ্ঠা, দলিল নং ১৬৮)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠের পদ্ধতি _
নিম্ন বর্ণিতঃ পদ্ধতিতে মুক্তাদি ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন:
* যে সব সালাতে ইমাম আস্তে-নীরবে ক্বিরায়াত পড়বেন সে সব সালাতে মুক্তাদি তার ইচ্ছামত মনের পরিপূর্ণ প্রশান্তিতে ধীর-স্থীরে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য সুূরা পাঠ করবেন।
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন- "আর ইমাম যদি আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন, তাহলে মুক্তাদী তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে।" (হুজ্জাতুল্লাহিল বা-লিগাহ, ২য় খন্ড, ১৪পৃষ্ঠা)
* ইমাম যখন জোরে উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পাঠ করবেন তখন নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে মুক্তাদি শুধু সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন-
১. সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন চুপে চুপে। আল্লাহর রাসূল বলেন, "তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে চুপে চুপে।" (সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
আবূ হুরাইরাহ রা কে জিজ্ঞেস করা হলো আমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা কিভাবে পরবো? উত্তরে তিনি বললেন- "তুমি সূরাহ ফাতিহা পড়বে চুপে চুপে।" (সহীহ বুখারী, হা/৩৯৫)
২. সূরাহ ফাতিহা পড়বেন ইমামের ছিকতা বা বিরতির সময়। "ইমাম যখন পড়েন তখন চুপ থাকবে। আর ইমাম যখন ছিকতা করেন তখন পড়বে।"
আল্লামা আশ-শাইখ বিন বায রহঃ বলেন: ইমামের ছিকতা বা বিরতির মর্ম হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে ইমাম প্রতি আয়াতে যে বিরতি নেন তা অথবা সূরাহ ফাতিহা শেষ করার পর যে বিরতি নেন তখন। অথবা সূরাহ ফাতিহার পরে ইমাম যে সূরাহ পড়বেন তখন। অতপর আল্লামা বিন বায। রহ: বলেন: যদি ইমাম কোন বিরতি না নেন, তখন মুক্তাদি ইমামের পড়া অবস্থায় সূরাহ ফাতিহা পড়বে ইহাই সবচাইতে সঠিক কথা উলামাদের নিকট। (ফাতাওয়া বিন বায, ১১খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা)
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন: জেহরী সালাতে মুক্তাদী ইমামের ছিকতার সময় এমন ভাবে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে, যাতে ইমামের ক্বিরায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড ১৪পৃষ্ঠা)
ইমামের পিছনে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে :- ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা ফরয়।
সালাত জেহরী হোক বা সিররী হোক অর্থাৎ- সালাত স্বরব বিশিষ্ট হোক বা নীরব বিশিষ্ট উভয় সালাতেই মুক্তাদি অবশ্যই সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে। ইমামের পিছনে যদি মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ না করে-তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা সকল মুসাল্লীর জন্য ফরয মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি হোক বা মুনফারিদ। মুসাল্লী মুক্বীম হোক বা মুসাফির।
ইমাম বুখারী (রাহ) বলেন: "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদি ক্বিরায়াত পড়া ফরয। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায়, সশব্দে ক্বিরায়াতের সালাত হোক বা নি:শব্দে, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরায়াত (সূরাহ ফাতিহা) পড়া অবশ্য কর্তব্য।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান -১০ অধ্যায়-৯৫)
★ জেহরী সালাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ:- "তোমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত কিছুই পড়বে না (জেহরী সালাতে) কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পড়বে না তার সালাত শুদ্ধ হবে না।" (আবূ দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত-হাদিস নং ৮৫৪, হাদীস হাসান, নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, হা/৭০৬)
★ আবূ সাঈদ খুদরী রাদায়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন:- " আমাদেরকে নিদের্শ দেয়া হয়েছিল আমরা যেন সূরা ফাতিহা পড়ি এবং যা সহজ তাও যেন পড়ি।" (সিররী সালাতে) (সহীহ আবূ দাউদ, হা/৮১৮, হাদিস সহীহ)
★ আবূ হুরাইরাহ রাদিঃ বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সা) আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি যেন ঘোষণা করে দেই যে, "নিশ্চয়ই সালাত শুদ্ধ নয় সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত। অতঃপর অতিরিক্ত কিছু"। (সহীহ আবূ দাউদ, হাদিস নং ৮২০, হাদীস সহীহ)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ " আমি যখন উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পড়ি, তখন তোমাদের কেউ যেন সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত আর কিছুই না পড়ে।" (দ্বারা কুত্বনী- এ হাদিসের সকল বর্ণনাকারী ছিকাল বা বিশ্বস্থ। নাইলুল আওত্বার হাদিস নং ৭০৭)
ইমাম আশ-শাওকানী ৭০৬ ও ৭০৭ নং হাদীস বর্ণনা করার পর বলেনঃ যারা এসকল হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে বলেন, ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা অবশ্য করণীয়-তারাই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। (নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, ৩১৩পৃষ্ঠা)
★ আনাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সা:) মুক্তাদিদের উদ্দেশ্যে বললেন: "তোমরা কি ইমামের ক্বিরায়াত পাঠ করা অবস্থায় ইমামের পিছনে ক্বিরায়াত পাঠ করে থাক? তোমরা এটা করবে না। তবে তোমরা অবশ্যই চুপে চুপে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী জুযউল ক্বিরায়াহ, ত্বাবরানী, বায়হাক্বী, সহীহ ইবনু হিব্বান হা: ১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
★ আল্লাহর রাসূল সা ইরশাদ করেন: "যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (সহীহুল বুখারী, হা/৭৫৬) অর্থাৎ- সালাত ফরয হোক বা নফল, জানাযা হোক বা ঈদ। মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি বা মুনফারিদ। সালাত স্বরবে হোক বা নীরবে। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফরে। সর্বাবস্থায় প্রতি রাকআতে প্রত্যেকের জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া ফরয।
* "আল্লাহর রাসূল সা সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি আমার পিছনে পড়ে থাক? তারা বললেন হ্যাঁ, আমরা খুব তাড়াহুড়া করে পাঠ করে থাকি। অত:পর রাসূল (সা) বললেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত কিছুই পড়বে না।" (বুখারী, জুযউল ক্বিরায়াহ-৬৬, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিজী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ। মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ, মুওয়াত্তা মালিক, সহীহ ইবনু খয়াইমাহ,, মিশকাত)
* আলী বিন আবূ তালিব রাদায়াল্লাহু হতে বর্ণিতঃ ইমাম যেসব সালাতে আস্তে-ক্বিরায়াত পড়েন, তখন তুমি জোহর, ও আসরের প্রথম দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পাঠ করবে। আর জোহর ও আসরের শেষ দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। মাগরিবের শেষ রাকয়াত এবং ইশার শেষ দুরাকয়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী- জুযউল ক্বিরায়াত হা/১)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেন:- "যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (বায়হাক্বী-কিতাবুল ক্বিরায়াত পৃ:৫৬)
* আল্লাহর নাবী সা ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি এমন সালাত আদায় করলো-যাতে সে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না। তার সে সালাত বিকলাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ, অকেজ তার সালাত অসম্পূর্ণই রইল। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯৫)
হাদিসের ইমামগণ হাদিসের কিতাবে যেভাবে অধ্যায় রচনা করেছেন-
ইমাম বুখারী (রহ)
শাইখ ইমামুল হুজ্জাহ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ আল-বুখারী আল-জুফী এর অধ্যায়:- "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদির কিরআত পড়া জরুরী, মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায় হোক, সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নি:শব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরাআত পড়া অবশ্য করণীয়।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান-১০, অধ্যায়ঃ ৯৫, পৃষ্ঠা ২৯৩ ও ৩৬৫ তা: পা:)
ইমাম মুসলিম (রহ)
ইমাম আবূ হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশাইরী আন-নিসাপুরী-এর অধ্যায়-"প্রতি রাকআতে সূরাহ ফাতিহা পড়া অপরিহার্য। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাহ-৪, অধ্যায়-১১, পৃষ্ঠা ৩৬১ ও ৩৭৫, আ: হা: লা:)
ইমাম তিরমিযী (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ মুহাম্মাদ বিন ঈসা বিন সাওরাহ আত-তিরমিযী- এর অধ্যায়ঃ- "সূরাহ আল-ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। (তিরমিযী, কিতাবু মাওয়াক্বীতিস সালাতি আন-রাসূলিল্লাহি সা -২, অধ্যায়-৭১)
ইমাম আবু দাউদ (রহ)
ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আশ'আস আসসিজিস্তানী- এর অধ্যায়ঃ- "যে ব্যক্তি তার সালাতে সূরাহ ফাতিহার কিরাআত ত্যাগ করলো।" (সহীহ আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাহ- ২ অধ্যায়- ১৩৬)
ইমাম নাসাঈ (রহ)
ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন-নাসাঈ- অধ্যায়-: "সালাতে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ অপরিহার্য। (সহীহ আন-নাসাঈ, কিতাবুল ইফতিতাহ-১১ অধ্যায়-২৪)
ইমাম ইবনু মাযাহ (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ আল-ক্বাযয়ীনী ইবনু মাযাহ এর অধ্যায়। "ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ প্রসঙ্গ"। (সহীহ ইবনু মাযাহ, কিতাবুস সালাহ-২, অধ্যায়-১১)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও হানাফী মাযহাব-
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের সম্মানিত আইয়িম্মাহ, মুহাদ্দিসীন, ফুক্বাহা, উলামা ও মাশাইখগণের অভিমত :
এক
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফেক্বার কিতাব হেদায়ার লেখক শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী আবূ বকর (রহ) হেদায়ায় ইমাম মুহাম্মাদ রহ থেকে বর্ণনা পেশ করে বলেন- "সতর্কতামূলক মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পড়াই উত্তম" (হেদায়া, ১ম খন্ড বাংলা প্রকাশনায় ইফাবা, পৃষ্ঠা ৯৪)। হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৯। ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলীল, পৃষ্ঠা ৯২-৯৩)
উল্লেখ্য যে, লোখসানের আশংকা হতে নিষ্কৃতি পাবার জন্য যে সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা যায় তাকে আরবীতে ইহতিয়াত বলা হয়। ঐ ইহতিয়াত শব্দের প্রতি হেদায়ার টীকায় উল্লেখ হয়েছে: এ কথার সম্ভাবনা হতে পারে যে, ইমাম শাফেঈ যা বলেছেন যে, সূরা ফাতিহা পড়া রুকন সকল মুসাল্লীর জন্য তাই প্রকৃত পক্ষে আসল হক কথা। (হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৬)
দুই
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী দেওবন্দী হানাফী রহ: বলেছেন: "রাসূল সা হতে এমন একটি হাদীস ও উদ্ধৃত হয়নি যাতে রাসূলুল্লাহ সা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। অত:পর বলেন- হানাফীরা এ সম্পর্কে যা কিছু প্রচার করে তার কতকগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট আথবা সনদের দিক দিয়ে আদৌ সহীহ বলে গণ্য নয়।" (রাসূলুল্লাহ সা সালাত, পৃষ্ঠা ২২৬ ও হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৬৩, আল্লামা আবূ মুহাম্মাদ আলীমুদ্দীন।)
তিনি আর বলেন, "আস্তের নামাযে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া উত্তম এবং জোরের নামাযে সাক্তার সময় পড়ায় কোন ক্ষতি নাই।
নিশ্চয়ই ইমাম মোহাম্মাদ যখন আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া জায়েজ এবং উত্তম বলেছেন, তখন অবশ্যই জোরের নামাযে ইমামের সাক্তার সময় পড়া আর আস্তের নামাযে পড়ার মধ্যে কোন পার্থক নাই। (ইমামুল কালাম, পৃষ্ঠা ১৫৬, আল্লামা আব্দুল হাই নাখলৌভী। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬, দলিল নং ১৭১)
তিন
ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানাফা রহ: এর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত- "শেষ বক্তব্য হলো: মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতা মূলকভাবে উত্তম।" (গাইছুল গাম্মাম হাশিয়া ইমামুল কালাম পৃষ্ঠা ১৬৫। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯০ দলিল নং ১৫৮)
চার
ইমাম আবূ হানিফা রহ: এর উস্তাদ হযরত 'আতা রহ: বলেন সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈগণ জোরের এবং আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্যে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন।" (জুয: ক্বিরা: ৮, ইমাম বুখারী রহ সূত্র: ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৮২ ও ৯০ দলিল নং ১৩৪ ও ১৫৮)
পাচঁ
হানাফী মাযহাবের অন্যতম বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম আল্লামা আইনী রহ: বলেন- "আমাদের অনেক ফুক্বাহায়ে হানাফী সকল নামাযে মুক্তাদি জন্যে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতামূলক উত্তম জানতেন।" (উমদাতুল কারী, শরহে বুখারী ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯। সূত্র ই: পি: সূ: ফা: প: দলিল, পৃষ্ঠা ৯৩ দলিল নং ১৬৫)
ছয়
পাক-ভারত উপ-মহাদেশের মুহাদ্দিসিনদের উস্তাদ আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী হানাফী রহ: বলেন- "যদি ইমাম জোরে ক্বেরাত পড়েন তাহলে মুক্তাদি ইমামের সাকতার বিরতির সময় পড়বে আর যদি ইমাম আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন তাহলে মুক্তাদি তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে। সূরাহ ফাতিহার ব্যাপারে এপদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। যাতে ইমামের ক্বিরাত অসুবিধা না হয়। ইমামের পিছনে এভাবে পড়াই আমার কাছে উত্তম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪। দলিল নং ১৭০)
সাত
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: এর সম্মানিত পিতা শাহ আব্দুর রাহীম দেহলভী রহ হানাফী -এর আমলঃ- "তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং জানাযা নামাযে ও পড়তেন।" (আনফাসুল আরিফিন, পৃষ্ঠা ৬৯। সুত্র দলিল-৯৪ পৃষ্ঠা, দলিল নং ১৬৮)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠের পদ্ধতি _
নিম্ন বর্ণিতঃ পদ্ধতিতে মুক্তাদি ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন:
* যে সব সালাতে ইমাম আস্তে-নীরবে ক্বিরায়াত পড়বেন সে সব সালাতে মুক্তাদি তার ইচ্ছামত মনের পরিপূর্ণ প্রশান্তিতে ধীর-স্থীরে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য সুূরা পাঠ করবেন।
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন- "আর ইমাম যদি আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন, তাহলে মুক্তাদী তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে।" (হুজ্জাতুল্লাহিল বা-লিগাহ, ২য় খন্ড, ১৪পৃষ্ঠা)
* ইমাম যখন জোরে উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পাঠ করবেন তখন নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে মুক্তাদি শুধু সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন-
১. সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন চুপে চুপে। আল্লাহর রাসূল বলেন, "তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে চুপে চুপে।" (সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
আবূ হুরাইরাহ রা কে জিজ্ঞেস করা হলো আমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা কিভাবে পরবো? উত্তরে তিনি বললেন- "তুমি সূরাহ ফাতিহা পড়বে চুপে চুপে।" (সহীহ বুখারী, হা/৩৯৫)
২. সূরাহ ফাতিহা পড়বেন ইমামের ছিকতা বা বিরতির সময়। "ইমাম যখন পড়েন তখন চুপ থাকবে। আর ইমাম যখন ছিকতা করেন তখন পড়বে।"
আল্লামা আশ-শাইখ বিন বায রহঃ বলেন: ইমামের ছিকতা বা বিরতির মর্ম হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে ইমাম প্রতি আয়াতে যে বিরতি নেন তা অথবা সূরাহ ফাতিহা শেষ করার পর যে বিরতি নেন তখন। অথবা সূরাহ ফাতিহার পরে ইমাম যে সূরাহ পড়বেন তখন। অতপর আল্লামা বিন বায। রহ: বলেন: যদি ইমাম কোন বিরতি না নেন, তখন মুক্তাদি ইমামের পড়া অবস্থায় সূরাহ ফাতিহা পড়বে ইহাই সবচাইতে সঠিক কথা উলামাদের নিকট। (ফাতাওয়া বিন বায, ১১খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা)
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন: জেহরী সালাতে মুক্তাদী ইমামের ছিকতার সময় এমন ভাবে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে, যাতে ইমামের ক্বিরায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড ১৪পৃষ্ঠা)
Previous
Next Post »

4 মন্তব্য(গুলি)

Write মন্তব্য(গুলি)
BLOGVIP
AUTHOR
১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ এ ১২:১০ PM delete

এখনও এ বিষয়ে আপনাদের সহী বুঝ আসে নাই। হানাফী ফক্বীহ ও আলেমদের লেখা প্রচ্ছন্ন মন নিয়ে পড়ুন, বুঝুন এবং আমল করুন।

Reply
avatar
BLOGVIP
AUTHOR
১৫ ফেব্রুয়ারী, ২০১৬ এ ১:৫১ PM delete

এখনও এ বিষয়ে আপনাদের সহী বুঝ আসে নাই। হানাফী ফক্বীহ ও আলেমদের লেখা প্রচ্ছন্ন মন নিয়ে পড়ুন, বুঝুন এবং আমল করুন।

Reply
avatar
Unknown
AUTHOR
৩ মে, ২০১৬ এ ৭:২৫ PM delete

তাহলে কি আপনি আমার উল্লেখ করা হাদীছ গুলিকে জাল বলবেন?

Reply
avatar
Unknown
AUTHOR
৩ মে, ২০১৬ এ ৭:২৬ PM delete

মন্তব্য করার জন্য ধন্যবাদ।

Reply
avatar

রবিবার, ৮ নভেম্বর, ২০১৫

ইমামের পিছনে সালাতে সুরায়ে ফাতিহা পাঠ ও আমিন বলা প্রসঙ্গে হাতেম বিন পারভেজ




























ইমামের পিছনে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে :- ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা ফরজ।
সালাত জেহরী হোক বা সিররী হোক অর্থাৎ- সালাত স্বরব বিশিষ্ট হোক বা নীরব বিশিষ্ট উভয় সালাতেই মুক্তাদি অবশ্যই সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে। ইমামের পিছনে যদি মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ না করে-তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা সকল মুসাল্লীর জন্য ফরজ মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি হোক বা মুনফারিদ। মুসাল্লী মুক্বীম হোক বা মুসাফির।
ইমাম বুখারী (রাহ) বলেন: "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদি ক্বিরায়াত পড়া ফরয। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায়, সশব্দে ক্বিরায়াতের সালাত হোক বা নি:শব্দে, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরায়াত (সূরাহ ফাতিহা) পড়া অবশ্য কর্তব্য।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান -১০ অধ্যায়-৯৫)
★ জেহরী সালাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ:- "তোমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত কিছুই পড়বে না (জেহরী সালাতে) কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পড়বে না তার সালাত শুদ্ধ হবে না।" (আবূ দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত-হাদিস নং ৮৫৪, হাদীস হাসান, নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, হা/৭০৬)
★ আবূ সাঈদ খুদরী রাদায়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন:- " আমাদেরকে নিদের্শ দেয়া হয়েছিল আমরা যেন সূরা ফাতিহা পড়ি এবং যা সহজ তাও যেন পড়ি।" (সিররী সালাতে) (সহীহ আবূ দাউদ, হা/৮১৮, হাদিস সহীহ)
★ আবূ হুরাইরাহ রাদিঃ বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সা) আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি যেন ঘোষণা করে দেই যে, "নিশ্চয়ই সালাত শুদ্ধ নয় সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত। অতঃপর অতিরিক্ত কিছু"। (সহীহ আবূ দাউদ, হাদিস নং ৮২০, হাদীস সহীহ)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ " আমি যখন উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পড়ি, তখন তোমাদের কেউ যেন সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত আর কিছুই না পড়ে।" (দ্বারা কুত্বনী- এ হাদিসের সকল বর্ণনাকারী ছিকাল বা বিশ্বস্থ। নাইলুল আওত্বার হাদিস নং ৭০৭)
ইমাম আশ-শাওকানী ৭০৬ ও ৭০৭ নং হাদীস বর্ণনা করার পর বলেনঃ যারা এসকল হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে বলেন, ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা অবশ্য করণীয়-তারাই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। (নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, ৩১৩পৃষ্ঠা)
★ আনাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সা:) মুক্তাদিদের উদ্দেশ্যে বললেন: "তোমরা কি ইমামের ক্বিরায়াত পাঠ করা অবস্থায় ইমামের পিছনে ক্বিরায়াত পাঠ করে থাক? তোমরা এটা করবে না। তবে তোমরা অবশ্যই চুপে চুপে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী জুযউল ক্বিরায়াহ, ত্বাবরানী, বায়হাক্বী, সহীহ ইবনু হিব্বান হা: ১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
★ আল্লাহর রাসূল সা ইরশাদ করেন: "যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (সহীহুল বুখারী, হা/৭৫৬) অর্থাৎ- সালাত ফরয হোক বা নফল, জানাযা হোক বা ঈদ। মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি বা মুনফারিদ। সালাত স্বরবে হোক বা নীরবে। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফরে। সর্বাবস্থায় প্রতি রাকআতে প্রত্যেকের জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া ফরয।
* "আল্লাহর রাসূল সা সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি আমার পিছনে পড়ে থাক? তারা বললেন হ্যাঁ, আমরা খুব তাড়াহুড়া করে পাঠ করে থাকি। অত:পর রাসূল (সা) বললেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত কিছুই পড়বে না।" (বুখারী, জুযউল ক্বিরায়াহ-৬৬, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিজী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ। মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ, মুওয়াত্তা মালিক, সহীহ ইবনু খয়াইমাহ,, মিশকাত)
* আলী বিন আবূ তালিব রাদায়াল্লাহু হতে বর্ণিতঃ ইমাম যেসব সালাতে আস্তে-ক্বিরায়াত পড়েন, তখন তুমি জোহর, ও আসরের প্রথম দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পাঠ করবে। আর জোহর ও আসরের শেষ দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। মাগরিবের শেষ রাকয়াত এবং ইশার শেষ দুরাকয়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী- জুযউল ক্বিরায়াত হা/১)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেন:- "যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (বায়হাক্বী-কিতাবুল ক্বিরায়াত পৃ:৫৬)
* আল্লাহর নাবী সা ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি এমন সালাত আদায় করলো-যাতে সে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না। তার সে সালাত বিকলাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ, অকেজ তার সালাত অসম্পূর্ণই রইল। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯৫)
হাদিসের ইমামগণ হাদিসের কিতাবে যেভাবে অধ্যায় রচনা করেছেন-
ইমাম বুখারী (রহ)
শাইখ ইমামুল হুজ্জাহ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ আল-বুখারী আল-জুফী এর অধ্যায়:- "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদির কিরআত পড়া জরুরী, মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায় হোক, সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নি:শব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরাআত পড়া অবশ্য করণীয়।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান-১০, অধ্যায়ঃ ৯৫, পৃষ্ঠা ২৯৩ ও ৩৬৫ তা: পা:)
ইমাম মুসলিম (রহ)
ইমাম আবূ হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশাইরী আন-নিসাপুরী-এর অধ্যায়-"প্রতি রাকআতে সূরাহ ফাতিহা পড়া অপরিহার্য। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাহ-৪, অধ্যায়-১১, পৃষ্ঠা ৩৬১ ও ৩৭৫, আ: হা: লা:)
ইমাম তিরমিযী (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ মুহাম্মাদ বিন ঈসা বিন সাওরাহ আত-তিরমিযী- এর অধ্যায়ঃ- "সূরাহ আল-ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। (তিরমিযী, কিতাবু মাওয়াক্বীতিস সালাতি আন-রাসূলিল্লাহি সা -২, অধ্যায়-৭১)
ইমাম আবু দাউদ (রহ)
ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আশ'আস আসসিজিস্তানী- এর অধ্যায়ঃ- "যে ব্যক্তি তার সালাতে সূরাহ ফাতিহার কিরাআত ত্যাগ করলো।" (সহীহ আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাহ- ২ অধ্যায়- ১৩৬)
ইমাম নাসাঈ (রহ)
ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন-নাসাঈ- অধ্যায়-: "সালাতে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ অপরিহার্য। (সহীহ আন-নাসাঈ, কিতাবুল ইফতিতাহ-১১ অধ্যায়-২৪)
ইমাম ইবনু মাযাহ (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ আল-ক্বাযয়ীনী ইবনু মাযাহ এর অধ্যায়। "ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ প্রসঙ্গ"। (সহীহ ইবনু মাযাহ, কিতাবুস সালাহ-২, অধ্যায়-১১)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও হানাফী মাযহাব-
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের সম্মানিত আইয়িম্মাহ, মুহাদ্দিসীন, ফুক্বাহা, উলামা ও মাশাইখগণের অভিমত :
এক
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফেক্বার কিতাব হেদায়ার লেখক শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী আবূ বকর (রহ) হেদায়ায় ইমাম মুহাম্মাদ রহ থেকে বর্ণনা পেশ করে বলেন- "সতর্কতামূলক মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পড়াই উত্তম" (হেদায়া, ১ম খন্ড বাংলা প্রকাশনায় ইফাবা, পৃষ্ঠা ৯৪)। হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৯। ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলীল, পৃষ্ঠা ৯২-৯৩)
উল্লেখ্য যে, লোখসানের আশংকা হতে নিষ্কৃতি পাবার জন্য যে সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা যায় তাকে আরবীতে ইহতিয়াত বলা হয়। ঐ ইহতিয়াত শব্দের প্রতি হেদায়ার টীকায় উল্লেখ হয়েছে: এ কথার সম্ভাবনা হতে পারে যে, ইমাম শাফেঈ যা বলেছেন যে, সূরা ফাতিহা পড়া রুকন সকল মুসাল্লীর জন্য তাই প্রকৃত পক্ষে আসল হক কথা। (হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৬)
দুই
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী দেওবন্দী হানাফী রহ: বলেছেন: "রাসূল সা হতে এমন একটি হাদীস ও উদ্ধৃত হয়নি যাতে রাসূলুল্লাহ সা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। অত:পর বলেন- হানাফীরা এ সম্পর্কে যা কিছু প্রচার করে তার কতকগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট আথবা সনদের দিক দিয়ে আদৌ সহীহ বলে গণ্য নয়।" (রাসূলুল্লাহ সা সালাত, পৃষ্ঠা ২২৬ ও হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৬৩, আল্লামা আবূ মুহাম্মাদ আলীমুদ্দীন।)
তিনি আর বলেন, "আস্তের নামাযে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া উত্তম এবং জোরের নামাযে সাক্তার সময় পড়ায় কোন ক্ষতি নাই।
নিশ্চয়ই ইমাম মোহাম্মাদ যখন আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া জায়েজ এবং উত্তম বলেছেন, তখন অবশ্যই জোরের নামাযে ইমামের সাক্তার সময় পড়া আর আস্তের নামাযে পড়ার মধ্যে কোন পার্থক নাই। (ইমামুল কালাম, পৃষ্ঠা ১৫৬, আল্লামা আব্দুল হাই নাখলৌভী। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬, দলিল নং ১৭১)
তিন
ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানাফা রহ: এর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত- "শেষ বক্তব্য হলো: মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতা মূলকভাবে উত্তম।" (গাইছুল গাম্মাম হাশিয়া ইমামুল কালাম পৃষ্ঠা ১৬৫। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯০ দলিল নং ১৫৮)
চার
ইমাম আবূ হানিফা রহ: এর উস্তাদ হযরত 'আতা রহ: বলেন সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈগণ জোরের এবং আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্যে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন।" (জুয: ক্বিরা: ৮, ইমাম বুখারী রহ সূত্র: ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৮২ ও ৯০ দলিল নং ১৩৪ ও ১৫৮)
পাচঁ
হানাফী মাযহাবের অন্যতম বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম আল্লামা আইনী রহ: বলেন- "আমাদের অনেক ফুক্বাহায়ে হানাফী সকল নামাযে মুক্তাদি জন্যে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতামূলক উত্তম জানতেন।" (উমদাতুল কারী, শরহে বুখারী ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯। সূত্র ই: পি: সূ: ফা: প: দলিল, পৃষ্ঠা ৯৩ দলিল নং ১৬৫)
ছয়
পাক-ভারত উপ-মহাদেশের মুহাদ্দিসিনদের উস্তাদ আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী হানাফী রহ: বলেন- "যদি ইমাম জোরে ক্বেরাত পড়েন তাহলে মুক্তাদি ইমামের সাকতার বিরতির সময় পড়বে আর যদি ইমাম আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন তাহলে মুক্তাদি তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে। সূরাহ ফাতিহার ব্যাপারে এপদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। যাতে ইমামের ক্বিরাত অসুবিধা না হয়। ইমামের পিছনে এভাবে পড়াই আমার কাছে উত্তম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪। দলিল নং ১৭০)
সাত
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: এর সম্মানিত পিতা শাহ আব্দুর রাহীম দেহলভী রহ হানাফী -এর আমলঃ- "তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং জানাযা নামাযে ও পড়তেন।" (আনফাসুল আরিফিন, পৃষ্ঠা ৬৯। সুত্র দলিল-৯৪ পৃষ্ঠা, দলিল নং ১৬৮)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠের পদ্ধতি _
নিম্ন বর্ণিতঃ পদ্ধতিতে মুক্তাদি ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন:
* যে সব সালাতে ইমাম আস্তে-নীরবে ক্বিরায়াত পড়বেন সে সব সালাতে মুক্তাদি তার ইচ্ছামত মনের পরিপূর্ণ প্রশান্তিতে ধীর-স্থীরে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য সুূরা পাঠ করবেন।
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন- "আর ইমাম যদি আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন, তাহলে মুক্তাদী তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে।" (হুজ্জাতুল্লাহিল বা-লিগাহ, ২য় খন্ড, ১৪পৃষ্ঠা)
* ইমাম যখন জোরে উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পাঠ করবেন তখন নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে মুক্তাদি শুধু সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন-
১. সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন চুপে চুপে। আল্লাহর রাসূল বলেন, "তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে চুপে চুপে।" (সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
আবূ হুরাইরাহ রা কে জিজ্ঞেস করা হলো আমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা কিভাবে পরবো? উত্তরে তিনি বললেন- "তুমি সূরাহ ফাতিহা পড়বে চুপে চুপে।" (সহীহ বুখারী, হা/৩৯৫)
২. সূরাহ ফাতিহা পড়বেন ইমামের ছিকতা বা বিরতির সময়। "ইমাম যখন পড়েন তখন চুপ থাকবে। আর ইমাম যখন ছিকতা করেন তখন পড়বে।"
আল্লামা আশ-শাইখ বিন বায রহঃ বলেন: ইমামের ছিকতা বা বিরতির মর্ম হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে ইমাম প্রতি আয়াতে যে বিরতি নেন তা অথবা সূরাহ ফাতিহা শেষ করার পর যে বিরতি নেন তখন। অথবা সূরাহ ফাতিহার পরে ইমাম যে সূরাহ পড়বেন তখন। অতপর আল্লামা বিন বায। রহ: বলেন: যদি ইমাম কোন বিরতি না নেন, তখন মুক্তাদি ইমামের পড়া অবস্থায় সূরাহ ফাতিহা পড়বে ইহাই সবচাইতে সঠিক কথা উলামাদের নিকট। (ফাতাওয়া বিন বায, ১১খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা)
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন: জেহরী সালাতে মুক্তাদী ইমামের ছিকতার সময় এমন ভাবে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে, যাতে ইমামের ক্বিরায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড ১৪পৃষ্ঠা)
ইমামের পিছনে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে :- ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করা ফরয়।
সালাত জেহরী হোক বা সিররী হোক অর্থাৎ- সালাত স্বরব বিশিষ্ট হোক বা নীরব বিশিষ্ট উভয় সালাতেই মুক্তাদি অবশ্যই সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ করতে হবে। ইমামের পিছনে যদি মুক্তাদি সূরা ফাতিহা পাঠ না করে-তাহলে তার সালাত শুদ্ধ হবে না। কেননা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা সকল মুসাল্লীর জন্য ফরয মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি হোক বা মুনফারিদ। মুসাল্লী মুক্বীম হোক বা মুসাফির।
ইমাম বুখারী (রাহ) বলেন: "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদি ক্বিরায়াত পড়া ফরয। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায়, সশব্দে ক্বিরায়াতের সালাত হোক বা নি:শব্দে, সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরায়াত (সূরাহ ফাতিহা) পড়া অবশ্য কর্তব্য।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান -১০ অধ্যায়-৯৫)
★ জেহরী সালাতে আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এর নির্দেশ:- "তোমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত কিছুই পড়বে না (জেহরী সালাতে) কেননা যে ব্যক্তি সূরাহ ফাতিহা পড়বে না তার সালাত শুদ্ধ হবে না।" (আবূ দাউদ, তিরমিযী, মিশকাত-হাদিস নং ৮৫৪, হাদীস হাসান, নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, হা/৭০৬)
★ আবূ সাঈদ খুদরী রাদায়াল্লাহু থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন:- " আমাদেরকে নিদের্শ দেয়া হয়েছিল আমরা যেন সূরা ফাতিহা পড়ি এবং যা সহজ তাও যেন পড়ি।" (সিররী সালাতে) (সহীহ আবূ দাউদ, হা/৮১৮, হাদিস সহীহ)
★ আবূ হুরাইরাহ রাদিঃ বলেনঃ আল্লাহর রাসূল (সা) আমাকে নির্দেশ দিয়ে বলেন, আমি যেন ঘোষণা করে দেই যে, "নিশ্চয়ই সালাত শুদ্ধ নয় সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত। অতঃপর অতিরিক্ত কিছু"। (সহীহ আবূ দাউদ, হাদিস নং ৮২০, হাদীস সহীহ)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেনঃ " আমি যখন উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পড়ি, তখন তোমাদের কেউ যেন সূরাহ ফাতিহা ব্যতিত আর কিছুই না পড়ে।" (দ্বারা কুত্বনী- এ হাদিসের সকল বর্ণনাকারী ছিকাল বা বিশ্বস্থ। নাইলুল আওত্বার হাদিস নং ৭০৭)
ইমাম আশ-শাওকানী ৭০৬ ও ৭০৭ নং হাদীস বর্ণনা করার পর বলেনঃ যারা এসকল হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করে বলেন, ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা অবশ্য করণীয়-তারাই হক্বের উপর প্রতিষ্ঠিত। (নাইলুল আওত্বার, ১ম খন্ড, ৩১৩পৃষ্ঠা)
★ আনাস রাঃ থেকে বর্ণিতঃ আল্লাহর রাসূল (সা:) মুক্তাদিদের উদ্দেশ্যে বললেন: "তোমরা কি ইমামের ক্বিরায়াত পাঠ করা অবস্থায় ইমামের পিছনে ক্বিরায়াত পাঠ করে থাক? তোমরা এটা করবে না। তবে তোমরা অবশ্যই চুপে চুপে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী জুযউল ক্বিরায়াহ, ত্বাবরানী, বায়হাক্বী, সহীহ ইবনু হিব্বান হা: ১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
★ আল্লাহর রাসূল সা ইরশাদ করেন: "যে ব্যক্তি সালাতে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (সহীহুল বুখারী, হা/৭৫৬) অর্থাৎ- সালাত ফরয হোক বা নফল, জানাযা হোক বা ঈদ। মুসাল্লী ইমাম হোক বা মুক্তাদি বা মুনফারিদ। সালাত স্বরবে হোক বা নীরবে। মুক্বীম অবস্থায় হোক বা সফরে। সর্বাবস্থায় প্রতি রাকআতে প্রত্যেকের জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া ফরয।
* "আল্লাহর রাসূল সা সাহাবাদের জিজ্ঞেস করলেন তোমরা কি আমার পিছনে পড়ে থাক? তারা বললেন হ্যাঁ, আমরা খুব তাড়াহুড়া করে পাঠ করে থাকি। অত:পর রাসূল (সা) বললেনঃ তোমরা সূরাহ ফাতিহা ব্যতীত কিছুই পড়বে না।" (বুখারী, জুযউল ক্বিরায়াহ-৬৬, মুসলিম, আবূ দাউদ, তিরমিজী, নাসাঈ, ইবনে মাযাহ। মুওয়াত্তা মুহাম্মাদ, মুওয়াত্তা মালিক, সহীহ ইবনু খয়াইমাহ,, মিশকাত)
* আলী বিন আবূ তালিব রাদায়াল্লাহু হতে বর্ণিতঃ ইমাম যেসব সালাতে আস্তে-ক্বিরায়াত পড়েন, তখন তুমি জোহর, ও আসরের প্রথম দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা এবং অন্য একটি সূরাহ পাঠ করবে। আর জোহর ও আসরের শেষ দুরাকয়াতে সূরাহ ফাতিহা পড়বে। মাগরিবের শেষ রাকয়াত এবং ইশার শেষ দুরাকয়াতে সূরা ফাতিহা পাঠ করবে।" (বুখারী- জুযউল ক্বিরায়াত হা/১)
* আল্লাহর রাসূল (সা) ইরশাদ করেন:- "যে ব্যক্তি ইমামের পেছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না তার সালাতই হলো না।" (বায়হাক্বী-কিতাবুল ক্বিরায়াত পৃ:৫৬)
* আল্লাহর নাবী সা ইরশাদ করেন- "যে ব্যক্তি এমন সালাত আদায় করলো-যাতে সে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করলো না। তার সে সালাত বিকলাঙ্গ, অপূর্ণাঙ্গ, অকেজ তার সালাত অসম্পূর্ণই রইল। (সহীহ মুসলিম হা/৩৯৫)
হাদিসের ইমামগণ হাদিসের কিতাবে যেভাবে অধ্যায় রচনা করেছেন-
ইমাম বুখারী (রহ)
শাইখ ইমামুল হুজ্জাহ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইসমাঈল বিন ইবরাহীম বিন মুগীরাহ আল-বুখারী আল-জুফী এর অধ্যায়:- "সব সালাতে ইমাম ও মুক্তাদির কিরআত পড়া জরুরী, মুক্বীম অবস্থায় হোক বা মুসাফির অবস্থায় হোক, সশব্দে ক্বিরাআতের সালাত হোক বা নি:শব্দে সব সালাতেই ইমাম ও মুক্তাদির ক্বিরাআত পড়া অবশ্য করণীয়।" (সহীহুল বুখারী, কিতাবুল আযান-১০, অধ্যায়ঃ ৯৫, পৃষ্ঠা ২৯৩ ও ৩৬৫ তা: পা:)
ইমাম মুসলিম (রহ)
ইমাম আবূ হুসাইন মুসলিম ইবনুল হাজ্জাজ আল-কুশাইরী আন-নিসাপুরী-এর অধ্যায়-"প্রতি রাকআতে সূরাহ ফাতিহা পড়া অপরিহার্য। (সহীহ মুসলিম, কিতাবুস সালাহ-৪, অধ্যায়-১১, পৃষ্ঠা ৩৬১ ও ৩৭৫, আ: হা: লা:)
ইমাম তিরমিযী (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ মুহাম্মাদ বিন ঈসা বিন সাওরাহ আত-তিরমিযী- এর অধ্যায়ঃ- "সূরাহ আল-ফাতিহা ছাড়া সালাত হয় না। (তিরমিযী, কিতাবু মাওয়াক্বীতিস সালাতি আন-রাসূলিল্লাহি সা -২, অধ্যায়-৭১)
ইমাম আবু দাউদ (রহ)
ইমাম আবূ দাউদ সুলাইমান ইবনুল আশ'আস আসসিজিস্তানী- এর অধ্যায়ঃ- "যে ব্যক্তি তার সালাতে সূরাহ ফাতিহার কিরাআত ত্যাগ করলো।" (সহীহ আবূ দাউদ, কিতাবুস সালাহ- ২ অধ্যায়- ১৩৬)
ইমাম নাসাঈ (রহ)
ইমাম আবূ আব্দুর রহমান আন-নাসাঈ- অধ্যায়-: "সালাতে সূরাহ আল-ফাতিহা পাঠ অপরিহার্য। (সহীহ আন-নাসাঈ, কিতাবুল ইফতিতাহ-১১ অধ্যায়-২৪)
ইমাম ইবনু মাযাহ (রহ)
ইমাম আল-হাফিজ আবূ আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ বিন ইয়াযীদ আল-ক্বাযয়ীনী ইবনু মাযাহ এর অধ্যায়। "ইমামের পিছনে ক্বিরাআত পাঠ প্রসঙ্গ"। (সহীহ ইবনু মাযাহ, কিতাবুস সালাহ-২, অধ্যায়-১১)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ ও হানাফী মাযহাব-
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠ করা প্রসঙ্গে হানাফী মাযহাবের সম্মানিত আইয়িম্মাহ, মুহাদ্দিসীন, ফুক্বাহা, উলামা ও মাশাইখগণের অভিমত :
এক
হানাফী মাযহাবের বিখ্যাত ফেক্বার কিতাব হেদায়ার লেখক শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী আবূ বকর (রহ) হেদায়ায় ইমাম মুহাম্মাদ রহ থেকে বর্ণনা পেশ করে বলেন- "সতর্কতামূলক মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পড়াই উত্তম" (হেদায়া, ১ম খন্ড বাংলা প্রকাশনায় ইফাবা, পৃষ্ঠা ৯৪)। হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৯। ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলীল, পৃষ্ঠা ৯২-৯৩)
উল্লেখ্য যে, লোখসানের আশংকা হতে নিষ্কৃতি পাবার জন্য যে সতর্কতার নীতি অবলম্বন করা যায় তাকে আরবীতে ইহতিয়াত বলা হয়। ঐ ইহতিয়াত শব্দের প্রতি হেদায়ার টীকায় উল্লেখ হয়েছে: এ কথার সম্ভাবনা হতে পারে যে, ইমাম শাফেঈ যা বলেছেন যে, সূরা ফাতিহা পড়া রুকন সকল মুসাল্লীর জন্য তাই প্রকৃত পক্ষে আসল হক কথা। (হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৫৬)
দুই
হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ মুহাদ্দিস আল্লামা আব্দুল হাই লাখনৌভী দেওবন্দী হানাফী রহ: বলেছেন: "রাসূল সা হতে এমন একটি হাদীস ও উদ্ধৃত হয়নি যাতে রাসূলুল্লাহ সা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করতে নিষেধ করেছেন। অত:পর বলেন- হানাফীরা এ সম্পর্কে যা কিছু প্রচার করে তার কতকগুলো একেবারেই ভিত্তিহীন, বানোয়াট আথবা সনদের দিক দিয়ে আদৌ সহীহ বলে গণ্য নয়।" (রাসূলুল্লাহ সা সালাত, পৃষ্ঠা ২২৬ ও হাকীকাতুস সালাত, পৃষ্ঠা ৬৩, আল্লামা আবূ মুহাম্মাদ আলীমুদ্দীন।)
তিনি আর বলেন, "আস্তের নামাযে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া উত্তম এবং জোরের নামাযে সাক্তার সময় পড়ায় কোন ক্ষতি নাই।
নিশ্চয়ই ইমাম মোহাম্মাদ যখন আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্য সূরাহ ফাতিহা পড়া জায়েজ এবং উত্তম বলেছেন, তখন অবশ্যই জোরের নামাযে ইমামের সাক্তার সময় পড়া আর আস্তের নামাযে পড়ার মধ্যে কোন পার্থক নাই। (ইমামুল কালাম, পৃষ্ঠা ১৫৬, আল্লামা আব্দুল হাই নাখলৌভী। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯৫-৯৬, দলিল নং ১৭১)
তিন
ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার ব্যাপারে ইমাম আবূ হানাফা রহ: এর সর্বশেষ সিদ্ধান্ত- "শেষ বক্তব্য হলো: মুক্তাদির জন্য ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতা মূলকভাবে উত্তম।" (গাইছুল গাম্মাম হাশিয়া ইমামুল কালাম পৃষ্ঠা ১৬৫। সূত্র ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৯০ দলিল নং ১৫৮)
চার
ইমাম আবূ হানিফা রহ: এর উস্তাদ হযরত 'আতা রহ: বলেন সাহাবায়ে কিরাম ও তাবেঈগণ জোরের এবং আস্তের নামাযে মুক্তাদির জন্যে সূরাহ ফাতিহা পড়ার পক্ষপাতি ছিলেন।" (জুয: ক্বিরা: ৮, ইমাম বুখারী রহ সূত্র: ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়ার দলিল, পৃষ্ঠা ৮২ ও ৯০ দলিল নং ১৩৪ ও ১৫৮)
পাচঁ
হানাফী মাযহাবের অন্যতম বিশিষ্ট মুহাদ্দিস ইমাম আল্লামা আইনী রহ: বলেন- "আমাদের অনেক ফুক্বাহায়ে হানাফী সকল নামাযে মুক্তাদি জন্যে ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়া সতর্কতামূলক উত্তম জানতেন।" (উমদাতুল কারী, শরহে বুখারী ৩য় খন্ড, পৃষ্ঠা ২৯। সূত্র ই: পি: সূ: ফা: প: দলিল, পৃষ্ঠা ৯৩ দলিল নং ১৬৫)
ছয়
পাক-ভারত উপ-মহাদেশের মুহাদ্দিসিনদের উস্তাদ আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী হানাফী রহ: বলেন- "যদি ইমাম জোরে ক্বেরাত পড়েন তাহলে মুক্তাদি ইমামের সাকতার বিরতির সময় পড়বে আর যদি ইমাম আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন তাহলে মুক্তাদি তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে। সূরাহ ফাতিহার ব্যাপারে এপদ্ধতি অনুসরণ করা উচিত। যাতে ইমামের ক্বিরাত অসুবিধা না হয়। ইমামের পিছনে এভাবে পড়াই আমার কাছে উত্তম। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ, ২য় খন্ড, পৃষ্ঠা ১৪। দলিল নং ১৭০)
সাত
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: এর সম্মানিত পিতা শাহ আব্দুর রাহীম দেহলভী রহ হানাফী -এর আমলঃ- "তিনি ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা পড়তেন এবং জানাযা নামাযে ও পড়তেন।" (আনফাসুল আরিফিন, পৃষ্ঠা ৬৯। সুত্র দলিল-৯৪ পৃষ্ঠা, দলিল নং ১৬৮)
ইমামের পিছনে মুক্তাদির সূরাহ ফাতিহা পাঠের পদ্ধতি _
নিম্ন বর্ণিতঃ পদ্ধতিতে মুক্তাদি ইমামের পেছনে সূরা ফাতিহা পাঠ করবেন:
* যে সব সালাতে ইমাম আস্তে-নীরবে ক্বিরায়াত পড়বেন সে সব সালাতে মুক্তাদি তার ইচ্ছামত মনের পরিপূর্ণ প্রশান্তিতে ধীর-স্থীরে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন এবং সূরা ফাতিহা পাঠের পর অন্য সুূরা পাঠ করবেন।
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন- "আর ইমাম যদি আস্তে ক্বিরায়াত পড়েন, তাহলে মুক্তাদী তার সুবিধা অনুযায়ী পড়বে।" (হুজ্জাতুল্লাহিল বা-লিগাহ, ২য় খন্ড, ১৪পৃষ্ঠা)
* ইমাম যখন জোরে উচ্চ:স্বরে ক্বিরায়াত পাঠ করবেন তখন নিম্নলিখিত পদ্ধতিতে মুক্তাদি শুধু সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন-
১. সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবেন চুপে চুপে। আল্লাহর রাসূল বলেন, "তোমরা সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে চুপে চুপে।" (সহীহ ইবনু হিব্বান হা/১৮৪৪, হাদীছ সহীহ)
আবূ হুরাইরাহ রা কে জিজ্ঞেস করা হলো আমরা ইমামের পিছনে সূরাহ ফাতিহা কিভাবে পরবো? উত্তরে তিনি বললেন- "তুমি সূরাহ ফাতিহা পড়বে চুপে চুপে।" (সহীহ বুখারী, হা/৩৯৫)
২. সূরাহ ফাতিহা পড়বেন ইমামের ছিকতা বা বিরতির সময়। "ইমাম যখন পড়েন তখন চুপ থাকবে। আর ইমাম যখন ছিকতা করেন তখন পড়বে।"
আল্লামা আশ-শাইখ বিন বায রহঃ বলেন: ইমামের ছিকতা বা বিরতির মর্ম হচ্ছে সূরাহ ফাতিহা পাঠের মধ্যে ইমাম প্রতি আয়াতে যে বিরতি নেন তা অথবা সূরাহ ফাতিহা শেষ করার পর যে বিরতি নেন তখন। অথবা সূরাহ ফাতিহার পরে ইমাম যে সূরাহ পড়বেন তখন। অতপর আল্লামা বিন বায। রহ: বলেন: যদি ইমাম কোন বিরতি না নেন, তখন মুক্তাদি ইমামের পড়া অবস্থায় সূরাহ ফাতিহা পড়বে ইহাই সবচাইতে সঠিক কথা উলামাদের নিকট। (ফাতাওয়া বিন বায, ১১খন্ড, ২২১ পৃষ্ঠা)
আল্লামা শাহ ওয়ালী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলভী রহ: বলেন: জেহরী সালাতে মুক্তাদী ইমামের ছিকতার সময় এমন ভাবে সূরাহ ফাতিহা পাঠ করবে, যাতে ইমামের ক্বিরায়াতে বিঘ্ন সৃষ্টি না হয়। (হুজ্জাতুল্লাহিল বালিগাহ ২য় খন্ড ১৪পৃষ্ঠা)

৪টি মন্তব্য:

  1. এখনও এ বিষয়ে আপনাদের সহী বুঝ আসে নাই। হানাফী ফক্বীহ ও আলেমদের লেখা প্রচ্ছন্ন মন নিয়ে পড়ুন, বুঝুন এবং আমল করুন।

    উত্তরমুছুন
    উত্তরগুলি
    1. তাহলে কি আপনি আমার উল্লেখ করা হাদীছ গুলিকে জাল বলবেন?

      মুছুন
  2. এখনও এ বিষয়ে আপনাদের সহী বুঝ আসে নাই। হানাফী ফক্বীহ ও আলেমদের লেখা প্রচ্ছন্ন মন নিয়ে পড়ুন, বুঝুন এবং আমল করুন।

    উত্তরমুছুন